পর্দা নাকি পরাধীনতা? || প্রবন্ধ || পথের কবি


 পর্দা নাকি পরাধীনতা? 


পর্দা অর্থ আবরণ, আচ্ছাদন, আবৃত করা কিংবা ঢেকে রাখা। এখানে কোথাও পর্দার অর্থ পরাধীনতা বলে নাই। তবুও একটা জাতি বলে বেড়াবে পর্দা দিয়ে মানুষকে পরাধীন করে রাখার অপচেষ্টা চলছে। বড়ই দুঃখ লাগে যে আজ আমরা পর্দাকে শুধু পোশাকের মাঝেই খুঁজে বেড়াই। অথচ পর্দা বেশ কিছুর জন্যই করা উচিৎ। 


পর্দা শুধু শারীরিক গোপনীয়তার জন্য নয়, চোখের দৃষ্টির জন্যও প্রয়োজন। এছাড়া আপনার আখলাক কিংবা আচরণেও পর্দার প্রয়োজন আছে। সে বিষয়ে পরে লিখবো। আপাতত শারিরীক পর্দা আর চোখের পর্দা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যাক। পোশাক আমাদের শারিরীক পর্দা দান করে। আর দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থাৎ আমাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখার মাধ্যমে আমাদের চোখের পর্দা করা হয়। আসলে দুইটা আমাদের মানব জাতির জন্য প্রয়োজন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পোশাকের পর্দাটা নারীদের জন্য আর চোখের পর্দাটা পুরুষদের প্রযোজ্য হয়ে থাকে। কেননা রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে একজন নারীই তার অঙ্গভঙ্গিতে একজন পুরুষকে আকর্ষণ করে আর পুরুষ তার দৃষ্টিকে পর্দা না করে নারীর আকর্ষণীয়তাকে উপভোগ করে। মানুষ যাই বলুক একটা পোশাকই একজন নারীর অঙ্গভঙ্গি আর পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সক্ষম। এবার তা ভালোর জন্যই হোক কিংবা খারাপের জন্যই হোক।


এত কিছু জানার পরেও এসব নিয়ে আধুনিক সমাজের অনেক প্রশ্ন থেকে যায়৷ আধুনিক সমাজ বলতে কিছু সেকুলার আর ফেমিনিস্টদের কথা বলছি। আসলে এদের সেকুলার কিংবা ফেমিনিস্ট বলাটা আমাদের শাব্দিক ভুল। কেননা এই শব্দ দুইটির সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে। প্রথমত সেকুলার হল ধর্ম নিরপেক্ষ, তবে যেখানে এই সমস্ত লোকের মাঝে ধর্ম নামের ছিটাফোঁটাও নেই, সেখানে নিরপেক্ষতা আসবে কিভাবে? এরপর ফেমিনিস্টের অর্থ যদি খুঁজি তাহলে আমরা দেখতে পাই, এর অর্থ হল নারীবাদী বা যিনি নারীর অধিকারের কথা বলে। আমি আপনাদের সবাইকেই বলছি, ঐসকল মানুষের দিকে চেয়ে দেখেন। তারা কি নারীদের অধিকারের কথা বলে? তারা নারীকে মূলত ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এবার তাহলে বলতেই পারি, ঐসব লোকদের সেকুলার ও ফেমিনিস্ট না বলে তাদেরকে যথাক্রমে এথিস্ট ও রেপিস্ট বলা যায়। 


আসুন এথিস্ট ও রেপিস্ট বলার সুনির্দিষ্ট কারন লক্ষ্য করি। এথিস্ট হল নাস্তিক যা বর্তমানের কিছু আধুনিক শিক্ষিত সমাজকে দেখলেই বুঝা যায়। তারা কোন ভাবেই কোন ধর্মকে স্বীকার করতে চায় না। পর্দা যে মহান আল্লাহর বিধান, তা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে না। আর রেপিস্ট হল ধর্ষক। এখন ধর্ষক হওয়ার জন্য শারীরিক ধর্ষণ করার প্রয়োজন নেই৷ ধর্ষক হওয়ার জন্য চোখই যথেষ্ট। বর্তমানের তথাকথিত ফেমিনিস্টরা মুলত চোখ দিয়ে যৌনতা উপভোগ করা সভ্য ও নির্দোষ রেপিস্ট। অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, "মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।" (সূরা নুর; আয়াত ৩০)


একটা কথা বলে রাখি, কোন নারী যদি পোশাকের দিক থেকে স্বাধীন হতে চায় তবে নারীবাদ সমাজ এর বিপক্ষে কখনো বলবে না। বরং তারা তাদের পক্ষে কথা বলবে। কেননা নারী যদি ছোট কাপড় পড়ে তাহলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হল পুরুষদের। নারী যত খোলামেলা কাপড় পড়বে ততই পুরুষদের জন্য আরও উপভোগ্য হবে। যে পুরুষ একটা নারীকে ধরা ছোয়া ছাড়াই অর্ধনগ্ন দেখতে পারে সে পুরুষ কখনোই নারীর পরাধীনতা চাইবে না। তারা এটাই চাইবে নারী যেন স্বাধীন ভাবে কাপড় খুলে ঘুরে বেড়ায়। আর এই জন্য বর্তমানের নারীরা উৎসাহ নিয়ে নিজেদেরকে যৌনতার পণ্য বানিয়ে অজান্তেই এসব ভদ্র বেশধারী রেপিস্ট পুরুষদের কাছে উপস্থাপন করে। 


অবশ্য কিছু নারী এতেই সন্তুষ্ট থাকে। অর্থাৎ বহু পুরুষদের শরণাপন্ন হওয়াই তাদের নেশা থাকে। এদেরকে আমি সুবিধাবাদী ভন্ড নারী বলি। ভন্ড বলার কারনটা পরে উল্লেখ করছি। এসব নিজেদের রূপ লাবন্য দিয়ে পুরুষদের আকৃষ্ট করে কাছে রাখার চেষ্টা করে। তারা নিজেরা বিয়ে করে না এবং এই বিষয় নিয়ে নিজেদের অনেক বুদ্ধিমান মনে করে। অন্যদিকে যারা সাংসারিক নারী, তাদেরকে এই নারীরা খুবই বোকা মনে করে। অথচ বহু কষ্টের কথা হচ্ছে এসকল নারীদের রূপ লাবন্য শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের জনপ্রিয়তাও কমতে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের জীবনে এমন একটা পরিস্থিতি চলে আসে যেখানে তাদের পাশে কেউ থাকে না। এই সমস্ত নারীদের পাশে সমাজের তথা কথিত নারীবাদী পুরুষরাও তখন দাঁড়ায় না। কেননা, ঐসময় জৌলুসহীন বৃদ্ধ চামড়া দেখে কোন পুরুষেরই যৌন চাহিদা আসে না। তাছাড়া একটা বয়স শেষে নারীদের ভোগ করা পুরুষরা নিজেকে সাধু বলে মনে করে, আর এসব নারীদের পতিতার সীল লাগিয়ে বাজারে চালিয়ে দেয়। তাই তাদের প্রতি দয়াও দেখায় না। বস্তুত নারীবাদী পুরুষ তথা সভ্য পরিচয়ধারী বিবেক বর্জিত পুরুষ এই সব নারীদের টিস্যুর মত ব্যবহার করে। প্রয়োজন শেষ হলে টিস্যুর মতই ছুড়ে ফেলে দেয়। মহান আল্লাহ এ বিষয়েও নির্দেশ দিয়েছেন, "আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।" (সূরা নুর; আয়াত ৩১)


অন্যদিকে যারা পর্দা করে, অর্থাৎ এই সমাজের ফেমিনিস্টদের চোখে যারা পরাধীন কিংবা বোকা, তারা মূলক সমাজে সবচেয়ে উচু মর্যাদা নিয়ে বাস করে। তারা পিতার কাছে যেমন ভাবে লালিত পালিত হয়, সমাজের হাত থেকে যেমন নিরাপদ থাকে তেমনই স্বামীর কাছে আদরের স্থান পায় আবার শেষ বয়সে সন্তানের দ্বারা সেবা যত্নও নসীব হয়। 


সুবিধাবাদী ভন্ড নারীদের যখন আপনি বলবেন পর্দা করতে, তখন তারা নানা চতুরতার সাথে বিষয়টাকে এড়িয়ে যাবে কিন্তু তারা তাদের প্রয়োজন হলে তারা সবই করতে পারবে। তাদের এমন ভন্ডামীর একটা ছোট উদাহরণ দিলেই হয়তো বুঝতে পারবেন। কিছুদিন আগেই পৃথিবী একটা মহামারী দেখেছে যাতে সামান্য সংক্রমণের জন্য বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঐসময় এই ভন্ড নারীগুলো মহামারীর সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য নানা ভাবে শরীরকে আবৃত করে ঘর থেকে বেড়িয়েছে। চোখ ছাড়া তাদের আর কিছুই দেখা যায়নি। আরেকটা মজার উদাহরণ দেই। অল্প বয়সী মেয়েরা মাঝে মাঝেই প্রেমিকের সাথে দেখা করার জন্য বোরকা ব্যবহার করা নিজেদের আড়াল করে। এসব ভন্ডামী নয় তো কি হতে পারে? 


এবার আসি আখলাকের বা আচরণের পর্দা নিয়ে। আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে একটা দুষ্টু সত্ত্বা আছে, যেটা এই লেখাগুলা পড়ার আগেও আমাদের মধ্যে বিদামান ছিল, সেই দুষ্টু সত্ত্বাকে পর্দায় আবদ্ধ করে আপনারা যেভাবে মনোযোগ দিয়ে এই লেখা গুলো পড়েছেন আর এসব নিয়ে চিন্তা করছেন, সেই পরিস্থিতিটাই হল আখলাকের পর্দা। এবার আশা করি আচরণের পর্দা আপনাদের বোঝানোর প্রয়োজন নেই। কারন আপনারা ভালই জানেন এবং বোঝেন।


আমার উদ্দেশ্য ছিল পর্দা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কিছু সেকুলার ও ফেমিনিস্টদেরকে বোঝানো মাত্র। তবে একটা আমি সেই সেকুলার ও ফেমিনিস্টদেরকে বলতে চাই, আপনারা আপনার মা, স্ত্রী ও মেয়েকে যদি অর্ধনগ্ন দেখতে না পারেন তাহলে দয়া করে রাস্তায় নেমে নারীবাদের স্লোগান দিয়েন না। কারন আপনি যে অধিকার নিয়ে কথা বলছেন তা যদি আপনার মা, স্ত্রী ও মেয়ের জন্য প্রযোজ্য না হয় তাহলে এমন অধিকারকে আমি বয়কট করি। মূলত একটা বিষয় মনে রাখবেন পর্দা কখনো কাউকে পরাধীন করে না৷ বরং এটা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে শেখায়। চলতে শেখায় নিরাপদে।

Post a Comment

0 Comments